ঢাকা, ০৫ মে রোববার, ২০২৪ || ২২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০২৪

শুদ্ধি অভিযানের দৌড় কতদূর? 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১৩ ৭ অক্টোবর ২০১৯  

দেশ-জাতি-সমাজ নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অত্যন্ত ঘোলাটে। পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, অনিয়ম, অন্যায়, অনাচার ও দুর্নীতিতে ভরা দেশ। বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন নামে অঙ্গসংগঠন তৈরি করেছে। শুরুতে সেগুলো তৈরির উদ্দেশ্য মহৎ ছিল। তবে পরবর্তীতে সময়ের প্রেক্ষাপটে বিচ্যুতি ঘটে। 
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দলই নয়, স্বাধীনতাত্তোর এদেশে নেতৃত্ব তৈরি এবং বিকাশের অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সুসংহত প্লাটফর্ম। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। সমাজে তাদের অনেক অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাজেই সংগঠনগুলো আজ নিজেদের কৃতকর্মের ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। 
এ ব্যর্থতা শুধু আওয়ামী লীগের নয়। এ ব্যর্থতা দেশ, সমাজ তথা জাতির। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানি কৃতকর্মের কারণে পদ হারিয়েছেন। এটি বুঝতে কারো বাকি নেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণের যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমান বিভিন্ন রীতি বর্হিভূত কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন। তাদের ৬ মাসের জেল হয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে হয়, অঙ্গসংগঠনের প্রয়োজনীয়তা কি? এর উত্তর হতে পারে, নতুন নেতৃত্ব গঠন এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণে সহায়তা করা। 
কিন্তু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের অঙ্গসংগঠনের নেতারা অনেক বেপরোয়া থাকেন। বিএনপির ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, তাঁতীদল, মৎসজীবী দল ও উলামা দলসহ মোট ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটিই। সেটি হলো নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন শিবিরও ব্যতিক্রম নয়।   
দূর্নীতির দায়ে দলটির প্রধান এবং বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন। তথাকথিত বিএনপির সরব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বর্তমান প্রেক্ষপটে নিষ্ক্রিয়তাই প্রমাণ করে, শুধু নিজেদের স্বার্থে এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে অঙ্গসংগঠনের পক্ষে কাজ করেছে। 
আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ৭টি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতীলীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ ইত্যাদি। ঢাকা শহরে কৃষকলীগের সদস্য প্রায় ৮ হাজার। এখানে কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের আসল কাজ কি? তারা কি ঢাকা শহরে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে চান? নাকি বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানাদিতে কার্ড ছাপিয়ে এক ধরনের চাঁদাবাজি করাই তাদের উদ্দেশ্য। 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাতে চাই, দেরিতে হলেও তিনি বুঝতে পেরেছেন-চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম অর্থাৎ আগে ঘর তবে তো পর। অঙ্গসংগঠনগুলোর জঞ্জাল সরাতে উদ্যোগী হয়েছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে সরানো এবং যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার এরই প্রমাণ দেয়। এভাবে একের পর এক কাঁটা সরিয়ে অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে। 
অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রের ব্যবহার, অবৈধ ব্যবসার হাত অনেক গভীর পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে থাকলে এর উৎস উৎঘাটন করতে হবে। যেমনটি করা হয়েছে ক্যাসিনো ব্যবসার ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে সবাইকে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অঙ্গসংগঠনগুলোতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা না থাকায় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভরাডুবি ঘটেছে। এ বিপর্যয় থেকে শিক্ষা গ্রহণের সময় এসেছে। ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযানের পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবং সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। 
আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই সাহস ও সদেচ্ছা দুটোই রয়েছে। এখন শুধু আমাদের অপেক্ষার পালা। আমরা যদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমাজের সর্বস্তরে এ শুদ্ধি অভিযান সফলতার সঙ্গে চালাতে পারি, তা হলে একদিন বিশ্ব দরবারে দূর্ণীতিমুক্ত, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জ্বীবীত একটি উজ্জ্বল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে।  আমাদের সবার সেটাই প্রত্যাশা। 
মোহা. জালাল উদ্দীন, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, 
উত্তরা কমার্স কলেজ, উত্তরা, ঢাকা। 

সিটিজেন জার্নালিজম বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর